স্টাফ রিপোর্টার :::
সিলেট নগরী ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে বেপরোয়াভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। ২০১৭ সালে উচ্চআদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও তা মানছে না ব্যাটারিচালিত রিক্সার মালিকরা। প্রতিদিনই এসকল রিক্সার ব্যাটারিচার্জ দিতে ব্যয় হচ্ছে শত শত ওয়াট বিদ্যুৎ। এগুলোর বেশিরভাগই অবৈধ সংযোগ থেকে চার্জ দেয়া হয়। ফলে লোডশেডিং বাড়ছে সিলেট নগরী ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে। এ সকল ব্যাটারি চালিত রিক্সার অবৈধ চার্জের সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। উপজেলা সদরে অন্তত ১৫টি কারখানায় অবৈধভাগে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চোরাই লাইন ব্যবহার করা হয়। যার নেপেথ্যে রয়েছেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি আবদুল আহাদ। তার যোগসাজসেই এসকল কারখানায় অবৈধভাবে বিদ্যুত ব্যবহার করা হয়। যার বিনিময়ে মাসে লাখ টাকা ইনকাম করেন আলোচিত আহাদ।
সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের ব্যাপারে উদাসীনতার কারণ হিসেবে অনেকে মানবিকতার দোহাই দেন। তারা বলেন, পঙ্গু লোকও এসকল রিক্সা চালাতে পারে। যে লোকের নিজেকে দাঁড় করানোর ক্ষমতা নেই, তার চালানো রিক্সা নগরবাসীর জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অথচ এ সকল রিক্সা চলাচল করতে অবৈধ চাঁদা ব্যতিত সরকারের কোষাগারে কোনো টাকা জমা হয় না। উল্টো সরকারী ভর্তূকির বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এসকল রিক্সার ব্যাটারি চার্জ দিতে।
অন্যদিকে প্যাডেলচালিত রিক্সার রেজিস্ট্রেশন বাবদ সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা সরকার নির্ধারিত ফিস আদায় করে থাকে। সিলেট নগরী ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে ১০ হাজারের বেশি অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচল করলেও তাদের কাছ থেকে সরকারের কোনো আয় নেই।
২০১৭ সালে যখন আইন করে সড়কে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। হাইকোর্টও এক আদেশে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো নিষেধাজ্ঞাই কার্যকর হয়নি।
এই ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার গতি বেশি থাকায় ও সিলেটে অধিক পরিমাণ ব্যাটারি চালিত রিক্সা থাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ অপকর্ম সংগঠিত করে চালকরা। তারা নানা ধরণের নেশা গ্রহণ ও ছিনতাইয়ের মতো কাজেও লিপ্ত। পাশাপাশি গতি বেশি থাকায় প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সকল ব্যাটারিচালিত রিক্সা অপসারণ না করা হলে সাধারণ মানুষের জীবনে ঝুঁকির মাত্রা বাড়বে।
পল্লী বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহারের কারণে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন গোলাপগঞ্জের সাধারণ মানুষ। আর অবৈধভাবে চার্জের কারখানা থেকে প্রতিদিন আদায় করা হয় হাজার হাজার টাকা। এই চাঁদার টাকায় অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন। এই সিন্ডিকেটের বদৌলতে বিদ্যুতের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পকেটেও যাচ্ছে টাকার ভাগবাটোয়ারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষিদ্ধ এসব যান বন্ধ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং দিন দিন এসব যানের সংখ্যা বাড়ছেই। অবৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কারণে বাড়ছে লোডশেডিংও।
ভুক্তভোগিরা জানান, সিলেটের গোলাপগঞ্জে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ইজিবাইকের সংখ্যা অন্তত ২ হাজার। ব্যাটারিচালিত যানের ভিড় গোলাপগঞ্জে এতোটাই বেড়েছে যে এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটাই যায় না। প্যাডেলচালিত রিক্সা বিলুপ্ত হতে চলেছে। গোলাপগঞ্জের ২ সহ¯্রাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারির চার্জ দেয়ার জন্য পৌর এলাকা ও আশপাশের ইউনিয়নে রয়েছে কয়েকটি গ্যারেজ। যেগুলোতে বিদ্যুতের অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া আছে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি আবদুল আহাদকে ম্যানেজ করে। ভুক্তভোগিরা ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের জন্য এসব নিষিদ্ধ যানকে দায়ি করে জানান, এগুলোর বেশিরভাগই অবৈধ সংযোগ থেকে চার্জ দেয়া হয়।